কষা পায়খানা বা কোষ্ঠকাঠিন্যের দূর করার ঘরোয়া উপায়।
পেট পরিষ্কার হচ্ছে না? পায়খানা করতে কষ্ট হয়? টয়লেটে অনেক সময় ধরে বসে থাকতে হয়? কোষ্ঠকনিষ্টের ভুগছি সমাধান কি?
ঘরোয়া ভাবে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায়
আমি এই আর্টিকেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ আর সেগুলোর সমাধান তুলে ধরবো। প্রত্যেকটা কারণ সহজ ভাষায় বুঝিয়ে বলবো যাতে আপনার পেটে কি হচ্ছে পুরোটাই বুঝতে পারেন আর সমাধান মেনে চলতে সুবিধা হয়।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে যেসব খাবার
খাদ্যে যথেষ্ট পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ না থাকা পেট পরিষ্কার হওয়ার জন্য খাবারে ফাইবার থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের পেটের ভেতরে থাকার নাড়িভুঁড়ি যেখানে পায়খানা তৈরি হয় এবং জমা থাকে সেখানে আসব ফাইবার অনেকটা স্পঞ্জের মত কাজ করে অর্থাৎ পানি শোষণ ও ধারণ করার মাধ্যমে পায়খানায় পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে । ফাইবার না থাকলে পায়খানা নরম হয় ভারী হয় আর সেই পায়খানা নাড়িভুঁড়ি ভেতর দিয়ে সহজেই চলাচল করতে পারে এবং সহজেই সেটা শরীর থেকে বের হয়ে যায়৷
আর আরো অনেক ভাবে সাহায্য করে, তাই খাদ্য যদি যথেষ্ট পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ না থাকে তখন কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। তাহলে সমাধান কি? খাবারে ফাইবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে।
যেসকল খাবারে ফাইবার পাওয়া যায় সেসব খাদ্য নিয়মিত খেতে হবে যেমন: ডাল ,ছোলা, গাজর, শসা, টমেটো, আপেল, কলা। প্রায় সব শাকসবজি ফলমূল অন্যান্য গোটা শস্যদানা ইত্যাদি ।
প্রতিদিনের খাদ্যাভাসে কিছু পরিবর্তন আনলে ফাইবারের পরিমাণ বাড়ানো যায়।
প্রতিবেলায় যদি সবজি না খেতে পারেন তাহলে তরকারি না খেতে চাইলে বা সবজি রান্না করা না হলে শসা, গাজর, টমেটো, চপ বানিয়ে খেতে পারেন।
নাস্তা খাওয়ার সময় একটা ফল যেমন কলা আপেল বা নাস্পতি খেতে পারেন, অল্প করে বাদাম খেতে পারেন। যদি ভালো লাগে তাহলে যেসব ফল বা শাকসবজি খোসাসহ খাওয়া যায় সেগুলো খোসাসহ খাওয়ার চেষ্টা করবেন। যেমন : আপেল, টমেটো, খোসাসহ। আলুর খোসা সাথেও ফাইবার থাকে তবে খোসাসহ খেলে অবশ্যই ভালো করে সেগুলো ধুয়ে নিবেন। যখন সম্ভব না হলে সবজি করে খাওয়ার চেষ্টা করবেন, বিভিন্ন ফল ব্লেন্ড করলে জুস বানালে বানালে আর্টস কমে যায়।
কোষ্ঠকাঠিন্য হলে যা খাওয়া উচিত নয় বা খাবারে ফাইবার বাড়ানোর ক্ষেত্রে যে জিনিস মাথায় রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ :
প্রথমত হঠাৎ করে খাবারের পরিমাণ বাড়ালে অনেকে বায়ু সমস্যা দেখা দেয় যেমন : পেট ফাঁপা লাগতে পারে তাই ধীরে ধীরে খাবারে ফাইবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে কি খাওয়া উচিত নয় তা নিয়েও আলচোনা হয়েছে । যে পরামর্শ গুলো বললাম সেগুলো নিয়ে একটা পরিকল্পনা তৈরি করে আপনার সুবিধা অনুযায়ী কোনটা আগে কোনটা পরে করবেন সেটা নিয়ে ভাবুন। একসাথে সবগুলো শুরু করবেন না, দ্বিতীয়ত একটু আগেই বলেছি যে ফাইবার পানি শোষণ করে, তাই খাদ্যে ফাইবার এর পরিমাণ বাড়ানোর সাথে সাথে যথেষ্ট পরিমাণ পানি নিশ্চিত করতে হবে।
কম পানি পান কোষ্ঠকাঠিন্যের দুই নম্বর কারণ।
যথেষ্ট পরিমাণে পানি না পান করায় কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ। পায়খানা নরম করতে হলে শরীরের পানি প্রয়োজন হয়, আবার পায়খানা যাতে আমাদের বৃহদন্ত্রে অর্থাৎ পেটের নাড়িতে সহজে চলাচল করতে পারে কোথাও আটকে না থাকে তার জন্য প্রয়োজন পানি। তাই আপনি যদি যথেষ্ট পরিমাণ পানি না পান করেন তাহলে পায়খানা নরম না হয়ে শক্ত হওয়া আর কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। দিনে অন্তত দুই লিটার পানি পান করতে হবে, আপনার সাথে একটা এক লিটারের বোতল রাখতে পারেন তাহলে দিনে কতটুকু পানি পান করছেন সেটা হিসাব করতে সহজ হবে।
দীর্ঘ সময় ধরে শুয়ে বসে থাকা
আমরা যদি হাঁটাচলা কমিয়ে দেয় ; শারীরিক পরিশ্রম না করি, অনেকক্ষণ ধরে শুয়ে বসে থাকি ব্যায়াম না করি তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। শরীরচর্চা করলে আমাদের বৃহদন্ত্র অর্থাৎ পেটের ভেতরে থাকে নাড়িভুঁড়ি সচল হয় এবং স্বাভাবিক থাকে, পায়খানা হতে সাহায্য করে। আমরা যত বেশি বসে থাকা কাজ করবো যেমন : অনলাইন ক্লাস, অফিসে বা ইউনিভার্সিটি তে যাওয়ার ততই আমাদের হাঁটাচলা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। হয়তো সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দুই কদম দিয়ে টেবিলে বসে সারাদিন সেখান থেকেই আপনি কাজ করছেন বা ক্লাস করছেন দিনে আর ব্যায়াম করা হচ্ছে না তখন কিন্তু কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। প্রতিদিন কিছু সময় হাঁটাহাঁটি করা ব্যায়াম করা বা দৌড়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন। একদম কিছু না করার চেয়ে অল্প কিছু করাও শ্রেয়। আজকে থেকেই শুরু করতে পারে ফরেন চিন্তা করলেন প্রতিদিন ১০ মিনিট ১৫ মিনিট হাটার অভ্যাস করুন। শুয়ে বা বসে থাকবেন না একটু উঠে হালকা ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি করে নিবেন কতক্ষণ ব্যায়াম করতে হবে আপনার বয়স 19 থেকে 64 এর মধ্যে হয় তাহলে আপনার লক্ষ্য থাকবে সপ্তাহে অন্তত আড়াই ঘন্টা মাঝারি ধরনের ব্যায়াম করা। মাঝারি ধরনের ব্যায়াম গুলো হলো দ্রুত হাঁটা সাইকেল চালানো ইত্যাদি।
যদি তার চেয়ে বেশি খাটুনির ব্যায়াম করে যেমন দৌড়তে ফুটবল খেলা দড়ি লাফানো তাহলে আপনার লক্ষ্য হবে সেগুলো সপ্তাহে অন্তত এক ঘণ্টা করে করা। অর্থাৎ সপ্তাহে ৭৫ মিনিট।
পায়খানার চাপ আসলে টয়লেটে চেপে রাখা।
পায়খানা আটকে রাখলে দিন দিন শরীর সেটা থেকে পানি শুষে নেয় ফলে পায়খানা ক্রমেই শক্ত হতে থাকে। পরে শরীর থেকে বের করা খুবই যন্ত্রণাদায়ক হয়। পায়খানার চাপ আসলে বেশি দেরি করবেন না বাথরুমে চলে যাবেন৷ যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ আছে তাদের জন্য আমরা প্যানে যেভাবে বসে সেই দেহভঙ্গি পায়খানা করার জন্য সবচেয়ে ভালো তাই যদি সম্ভব হয় প্যাড ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন। তবে বাসায় যদি প্যান্ না থাকে বা কমোড ব্যবহার করতেই হয় তাহলে পায়ের নিচের ছোট টুল দিয়ে পা উচু করতে পারে হাঁটুদুটো কোমরের উপরে তোলার চেষ্টা করবেন।
মানসিক উদ্বিগ্নতা ও বিষণ্নতা
আপনি যদি অনেক মানসিক চাপে থাকে উদ্বিগ্নতা কিংবা বিষণ্ণতায় ভোগেন তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। মানসিক প্রশান্তি আনে এমন কিছু কাজ করার চেষ্টা করবেন, সেটা হতে পারে আপনজনের সাথে সময় কাটানো আর যদি আপনি বিষন্নতা বাহ্যিক পারেন। অথবা উদ্বিগ্নতায় রোগে ভুগে থাকেন তাহলে সেই রোগের চিকিৎসা নেবেন। আপনার মানসিক অবস্থার উন্নতির সাথে সাথে কোষ্ঠকাঠিন্য আস্তে আস্তে সেরে উঠবে।
ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
নির্দিষ্ট কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে যেমন: আমাদের জাতীয় ব্যথার ওষুধ, আয়রন বা ক্যালসিয়াম সাপ্লেমেন্ট ইত্যাদি। এসব ওষুধের কারনে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। যদি মনে হয় কোনো কোন ওষুধের কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বেড়ে গেছে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
আর যদি এমন হয় যে আপনাকে সারাজীবন খেতেই হবে তাহলে আগে যে উপায়গুলো বললাম সেই উপায় কোষ্ঠকাঠিন্য দূরে রাখার চেষ্টা করবেন সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্য কোনো গুরুতর রোগের কারণে হয় না তবে কিছু ক্ষেত্রে রোগের কারণেও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে যেমন ঃ থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে ডায়াবেটিস রোগ হলে।
কোষ্ঠকাঠিন্য হলে কখন ডাক্তারের সহায়তা নিতে হবে?
যদি ঘরোয়া উপায়ে সমাধান না হয়, যদি দীর্ঘদিন যাবত নিয়মিত কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে ভোগেন, পেট ফাঁপা লাগে, অনেক দিন কোষ্ঠকাঠিন্য থাকার উপযোগী ডায়রিয়া শুরু হয়, যদি পায়খানার সাথে রক্ত যায় বা পায়খানা কালো হয় , পায়খানার রাস্তায় যদি ব্যথা হয় কোষ্ঠকাঠিন্যের সাথে যদি পেট ব্যথা হয় বা জ্বর আসে সারাক্ষণ ক্লান্ত লাগতেছে, ওজন অনেক কমে যায়। কোন যদি রক্ত শূন্যতায় ভোগেন
এসব লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে একজন ডাক্তারের সহায়তা নেবেন।
নিরাপদে থাকবেন শীঘ্রই আবার দেখা হবে.
কোষ্ঠকাঠিন্যের ঘরোয়া উপায়ে চিকিৎসা, কষা পায়খানা ঘরোয়া চিকিৎসা।