ঘরোয়া ভাবে গ্যাস্টিকের সমাধান ও চিকিৎসা


কিছু খেতে পারিনা শুধু বুক জ্বালাপোড়া করে,  গ্যাস্টিকের সমাধান কি? 

আমাদের অনেকেরই খাবার পরে বুকের মাঝখান থেকে জ্বালাপোড়া করে এই রোগটাকে আমরা অনেক ধরনের নামে চিনে থাকি যেমন :গ্যাস্ট্রিক, আলসার,  এসিডিটি, হার্ডবোর্ড, রিফ্লাক্স ইত্যাদি। তবে ডাক্তারি ভাষায় রোগের নাম অনেক বড় হলেও সমাধান জানতে নাম মুখস্ত করা লাগবে না।

কেন আমাদের গ্যাস্টিকের সমস্যা হয় সেটা আগে সংক্ষিপ্ত করে বলি।

কেন এই সমস্যাটা হয় সেটা দিয়ে শুরু করি৷ আমরা যখন কিছু খায় পাকস্থলীতে যায়, খাবার হজম করার জন্য পাকস্থলীতে একধরনের এসিড নির্গত হয়।
অ্যাসিড আর খাবার দুটোই পাকস্থলী থেকে নিচের দিকে নামতে থাকে তবে যদি অ্যাসিড নিচের দিকে নেমে গলার দিকে উপরে উঠে আসে তখন আমরা বুকে জ্বালা-পোড়া অনুভব করি।

তাহলে পাকস্থলীর কেন উপরের দিকে চলে আসে নীচে না নেমে ? কোনো কারণ ছাড়াই এমন হতে পারে, আবার কিছু কিছু জিনিস এই সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে বা বাড়িয়ে দিতে পারে।  যেমন নির্দিষ্ট কিছু খাবার,  কারও কারও বেশি মসলা দিয়ে রান্না করা খাবার খেলে জ্বালা পোড়া শুরু হয়, আবার কারো কফি খেলে অসুবিধা শুরু হয়।  একেক জনের একেক রকম হতে পারে।  যারা ধূমপান করেন তাদের এই সমস্যা বেশি দেখা দেয় যদি কেউ অনেক টেনশনে থাকেন সেখানে থেকে হতে পারে গ্যাস্টিকের সমস্যা।

আপনার ওজন যদি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয় তখন এই সমস্যা বেশি হতে পারে। যারা গর্ভবতী তারা প্রায়ই এ সমস্যায় ভোগেন,  আবার যাদের হায়তানিয়া নামের একটা রোগ আছে যেখানে পাকস্থলীর কিছু অংশ বুকের উপর চলে আসে তাদের মধ্যেই বুক জ্বালাপোড়া সমস্যা দেখা যায় ।

এছাড়াও  নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ আছে যেগুলো থেকে গ্যাস্টিকের সমস্যা তৈরি হতে পারে যেমন : অ্যাসপিরিন (ecospiron) আইবুপ্রফেন (Ibuprofen) ইত্যাদি।

ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ খান তাহলে কোনভাবেই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজে ওষুধ গুলো বন্ধ করবেন না।  আপনার ডাক্তারকে জানানো শুরু করার পরে মনে হচ্ছে জ্বালাপোড়া সমস্যা বেড়ে গেছে ডাক্তার আপনাকে বদলে দিতে পারেন অথবা জ্বালা প্রয়োজনে অন্য ওষুধ দিতে পারেন।

ঘরোয়া ভাবে গ্যাস্টিকের সমাধান ও চিকিৎসা, গ্যাস, পেট ব্যাথা, এসিটিডি








এখন বলব ঘরোয়া ভাবে যে সব উপায়ে আপনি গ্যাস্টিকের সমস্যা কমাতে পারেন 

আমাদের প্রতিদিনের অভ্যাস এর কিছু পরিবর্তন করলে কিন্তু আমি নিজে নিজেই এই সমস্যা অনেকটা কমিয়ে আনতে পারি, একবারে পেট ভরে খেলে সমস্যা বেশি হয়।  তাই অনেক খাবার একসাথে খাবেন না,  সারাদিনে ভাগ ভাগ করে অল্প অল্প খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।  বেশি খেলে পাকস্থলীতে ভরে ওঠে একটা বেলুন এর কথা চিন্তা করতে পারেন বাতাস দিলে যেমন বেলুন ফুলে কিছুটা তেমনই খাবার ঢুকলে পাকস্থলীও প্রসারিত হয়।  একবারে অনেক খাবার খেলে পাকস্থলী অনেক ফুলে ওঠে আর তখন পাকস্থলীর ভেতরে যা আছে তা উপরের দিকে উঠে আসতে পারে আর শুরু হতে পারেন বুকে জ্বালা পোড়া।

খাবারের অনিয়ম
খাবারের সময় অনিয়ম করবেন না সময়মত খাবার না খেলে গ্যাস্টিকের রোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায় নাম গ্যাসট্রাইটিস, পাকস্থলীর ক্ষত দেখা দেয়,  এছাড়াও ইনফেকশনও  হতে পারে। আর এইসব রোগ হলেও আপনার পেটে জ্বালা পোড়ার মতো ব্যথা হতে পারে।  আপনার পক্ষে বোঝা সম্ভব না জ্বালাপোড়া কোন কারনে হচ্ছে তাই পাকস্থলী সুস্থ রাখতে আপনাকে নিয়ম করে সময়মতো খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

ভুল ধারনা ও  খাবারের নিয়ম
অনেকের মাঝেই একটা ধারণা আছে , যাদের গ্যাস্টিকের সমস্যা তাদের জন্য দুনিয়ার প্রায় সব খাবারই নিষেধ শুধুমাত্র সিদ্ধ যাওয়া ছাড়া। সিদ্ধ খাবার খেতে হবে এই ধারণাটা কিন্তু ঠিক না। তাহলে সঠিক টা কি? একজনের জন্য একেক ধরনের খাবারে সমস্যা সৃষ্টি করে, যেসব খাবারে আপনার বুকে জ্বালা পোড়া করে আপনি শুধু সেই সব খাবার এড়িয়ে চলবেন। সেটা হতে পারে মসলা দেয়া, অতিরিক্ত তেল দেয়া খাবার।  আপনার প্রিয় চপ, মুড়ি, মুড়ি চানাচুর,  চটপটি,  এমনকি ডালভাত।  আপনার কোন খাবারে সমস্যা হয় সেটা আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে এবং সেসব খাবার  এড়িয়ে চলতে হবে। রাতের খাবারটা আগে আগেই সেরে ফেলবেন ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত তিন চার ঘণ্টা আগে। আপনি যদি এগারটার দিকে ঘুমাতে যান তাহলে কমপক্ষে সাড়ে সাতটায় খেতে বসুন। আটটার মধ্যে খাওয়া শেষ তারপর কিন্তু রাত 11 টা পর্যন্ত জেগে থাকতে হবে।
ভরপেটে চিৎ হয়ে শুলে পাকস্থলী থেকে গ্যাস্টিক আসার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। 

খাবার খেয়ে ঘুমানোর নিয়ম।

কিছু না খেয়ে তিন চার ঘন্টা জেগে থাকা কিন্তু একটু কষ্টেরই বটে,  মনে হয় অল্প কিছু খেয়ে ফেলি তবুও নিজেকে আটকাতে হবে।

বিছানার উচ্চতা
ঘুমানোর সময় বা বিছানায় শোয়ার সময় মাথা আর বুক ১০ থেকে ২০ সেন্টিমিটার উঁচুতে রাখবেন।  সেটা পাকস্থলীর এসিড উপরে ওঠা থামাবে,  কারণ এতে শুধু আপনার মাথাটা উঁচু হয় বরং তোষকের নিচে বা খাটের নিচে কিছু দিয়ে খাটের তারিখ উঁচু করে নিবেন এবং সেই দিকে মাথা দিবে যাদের রাতের বেলা জ্বালাপোড়া সমস্যা বেশি হয় তাদের জন্য এই ধাপটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

ঘুমের সময় দেহভঙ্গি টা যেন স্বাস্থ্যকর থাকে আঁকাবাঁকা অস্বাস্থ্যকর হলে আবার শরীর ব্যথার সৃষ্টি হতে পারে।

সঠিক মাপের বালিশ ব্যাবহার করুন
বালিশ এর উচ্চতা পরিবর্তন করলে অনেকেরই ঘাড় ব্যথা হয় । এবার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলব যেটা শুধু আপনার বুকে জ্বালা পোড়ায় কমাবে না আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হবে ।  আপনার যদি ওজন বেশি হয় তাহলে সেটা কমানোর চেষ্টা করুন।  অতিরিক্ত ওজন অনেক ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করে ডায়াবেটিস রোগ ইত্যাদি।  অনেক কিছুই এই অতিরিক্ত ওজনের সাথে সম্পর্কযুক্ত, ওজন কমিয়ে ফেলা এবং ক্ষমতা ধরে রাখাই শ্রেয়। আপনার বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা সমাধানেও অনেক সাহায্য করবে।ধুমপানের কারণে গ্যাস্টিক

ধূমপান বন্ধ করতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে যারা ধূমপান কমিয়ে ফেলে বা  বন্ধ করে দেয় তাদের এই সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়। আর ধূমপান নানা ধরনের রোগের কারণ,  তাই এই অভ্যাসটা পরিত্যাগ করাই শ্রেয়।  এতক্ষণ জীবনাচরণে কিছু পরিবর্তন আনার কথা তবে সবার রোগ এমন অবস্থায় থাকবে না যে শুধু জীবনাচরণের পরিবর্তনেই সেরে যাবে ঔষধের সাহায্য দরকার হতে পারে তবে ওষুধের পাশাপাশি এই ধাপ গুলো মেনে চলুন।


এখন বলে দিচ্ছি কোন কোন লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন**
  - যদি বারবার গ্যাস্টিক সমস্যা দেখা দেয়
  - প্রতিদিনের কাজে ব্যাঘাত ঘটায় অথবা তিন সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে প্রায় প্রতিদিনই এই সমস্যা দেখা দেয়
  - বয়স 55 বা তার বেশি হয়ে থাকে

উপরের কারণ আপনার মধ্যে থাকলে আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।

গ্যাস্টিকের ছয়টা বিপদজনক লক্ষণ

মাথায় রাখতে হবে এগুলো দেখা দিলে আপনাকে অবশ্যই অবশ্যই চিকিৎসকের সহায়তা নিতে হবে । এগুলোকে বলে এলার্ম সিস্টেম অর্থাৎ এগুলো দেখা দিলে অন্য কোনো গুরুতর রোগ হচ্ছে কিনা সেটা যাচাই করার প্রয়োজন পড়ে । চিকিৎসক সেটা যাচাই করবে তবে লক্ষণগুলো আপনার জানা থাকা লাগবে যাতে আপনি সময়মতোই চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে পারেন।
  - ওজন কমে যাচ্ছে কোনো চেষ্টা ছাড়ার কোনো কারণ ছাড়াই
  - খাবার গিলতে সমস্যা হচ্ছে গলায় আটকে যাচ্ছে
  -  তিন বার বার বমি হচ্ছে
  -  বমি বা পায়খানার সাথে রক্ত যাচ্ছে পায়খানা কালো হচ্ছে বমির মধ্যে কফির দানার মত কিছু দেখা যাচ্ছে কফির দানা গুলো গুলো জমে থাকার রক্ত মনে হচ্ছে
  -  পেটের চাকার মতো কিছু একটা হয়েছে
  -  আয়রনের অভাব জনিত রক্তশূন্যতায় ভুগছেন
এসব লক্ষণ দেখা দিলে মানেই গুরুতর কিছু হয়েছে,  এমন না তবে একটা সম্ভাবনা আছে তাই অবশ্যই একজন চিকিৎসকের সহায়তা নিবেন। আর যদি পেটে হঠাৎ করে তীব্র ব্যথা শুরু হয় তাহলে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে।  অনেক তথ্য বললাম সব মনে নাও থাকতে পারে।  শেষ করার আগে একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলে নেই এই বুকে জ্বালা পোড়া যাকে আমরা অনেকেই কাউসার বলে থাকি তবে আলসার অন্য একটা রোগ সেটা নিয়ে আজকে আলোচনা করিনি ওয়েবসাইটে এবং ফেসবুক পেজের শীঘ্রই এই সংক্রান্ত তথ্য পাবেন নিরাপদে থাকবেন শীঘ্রই দেখা হবে।

গ্যাস, পেট ব্যাথা,  এসিডিটি। 



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url