ঘরোয়া উপায়ে মাথা ব্যথার সমাধান।
আপনি যদি হঠাৎ হঠাৎ বা প্রায়ই মাথাব্যথায় ভোগেন তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। মৃদু থেকে শুরু করে তীব্র সব ধরনের মাথাব্যথা নিয়ে আলোচনা করব। কারণ গুলো সহজ ভাষায় বুঝিয়ে বলবো যাতে আপনার মাথায় কেন ব্যথা হচ্ছে বুঝতে পারেন। এতে সমাধান মেনে চলতে সুবিধা হবে। শুরুতেই জানতে হবে সবচেয়ে কমন নাথানিয়েল কারণ আপনার মাথা ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি এটা এতটাই কমন যে প্রতি ১০০ জন মানুষের মধ্যে ৭৮ জনি এই মাথাব্যথায় ভোগেন জীবনের কোনো এক সময়ে। এটার নাম হচ্ছে টেনশন টাইপ মাথাব্যথা, তবে নামের টেনশন শব্দটাই থাকলেও এটা টেনশন ছাড়া অন্যান্য অনেক কারণেই হয়।
ঘুমের কারণে মাথাব্যথা
আপনি সারা সপ্তাহে প্রতিদিন ১০ ঘন্টা করে কাজ করে অসুস্থ বোধ করেন কিন্তু ছুটির দিন লম্বা একটা ঘুম দিয়ে উঠে দেখেন মাথাব্যথা করছে। এটার কারণ হলো : হঠাৎ মানসিক চাপ কমে যাওয়ার কারণে মাথায় এক ধরনের হরমোন কমে যাওয়া বাধা দিলে এমনটা হয়। ঘাবড়ে যাবেন না বেশি ঘুমালে সবার মাথা ব্যথা না হলেও এটা বেশ কমন, শুধু আপনার একার ক্ষেত্রে এটা ঘটে না।
আপনার এমন মাথা ব্যথা হলে ছুটির দিনে বেশি ঘুমানোর সংবরণ করুন আর বেশি ঘুমানোর কারণে এই মাথাব্যথা হতে পারে, বেশি ঘুমানো নিয়ে হলেও মাথাব্যথা হতে পারে অনেকের ঘুম কম হলে মস্তিষ্কের ব্যথা অনুভব করার ক্ষমতা বেড়ে যায়, অল্পতেই ব্যথা অনুভব হয় তখন মাথা ব্যথা দেখা দিতে পারে। আর ঘুম হতে থাকলে এই মাথাব্যথা বারবার দেখা দিতে পারে৷ তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে।
নির্দিষ্ট কিছু খাবার চা-কফি কোলাবা কোমল পানীয় খুব বেশি পরিমাণে খেলে অনেকের এই ধরনের মাথাব্যথা হতে পারে । কারণ এগুলোতে আছে যা মাথা ব্যথার সৃষ্টি করতে পারে। যদি এসব পানীয় পান করলে দেখেন যে আপনার মাথা ধরেছে তাহলে এগুলো কম পরিমাণে পান করতে হবে
পানি কম খাওয়ায় মাথাব্যথা
যতটুকু পানি খাচ্ছেন তার চেয়ে বেশি পরিমাণ পানি শরীর থেকে বের হয়ে গেলে মাথাব্যথা দেখা দিতে পারে। আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না কখন শরীরে পানি স্বল্পতা দেখা দিচ্ছে, শুধুমাত্র বমি বা ডায়রিয়ার নয় অতিরিক্ত ঘামলে বা পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করলেও পানি স্বল্পতা দেখা দিতে পারে। দিনে অন্তত দুই লিটার পানি পান করতে হবে মাথাব্যথা শুরু হলেও যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান করার চেষ্টা করবেন
খাওয়া দাওয়ায় অনিয়ম মাথা ব্যথার কারণ
খাওয়া দাওয়ায় অনিয়ম করলে বা এক বেলা খাবার না খেলে মাথা ব্যথা করতে পারে। কেন আমরা যে খাই সেই খাবার থেকে সরিয়ে প্রকারের চিনি তৈরি করে যেটা ব্রেইনের খাদ্য। আপনি না খেলে রক্তের চিনির পরিমাণ কমে যায়, আর সে কারণে মাথাব্যথা দেখা দিতে পারে। কোন বেলার খাবার বাদ দেয়া যাবে না মাথাব্যথা হলেও সময় মত খাবার খেয়ে নিতে হবে
সারাদিন শুয়ে বসে থাকলে মাথা ব্যথা হয়
সারাদিন শুয়ে বসে থাকলে মাথাব্যথা দেখা দিতে পারে। সমাধান কি বুঝতেই পারছেন ; নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে
মানসিক চাপ
এটা খুবই কমন একটা কারণ কোন কিছু নিয়ে মানসিক চাপে থাকলে মাথা ব্যথা হতে পারে। তাই মানসিক চাপে আছেন তার সমাধান করে ফেলতে হবে।
মাথা ব্যথার ওষুধ কি?
ওষুধ খাওয়ার আগে একটা বিষয় জানতে হবে তা হল আপনার মাথা ব্যথাটা অন্যান্য কারণে মাথাব্যথা। যেমন : মাইগ্রেনের মাথাব্যথা নয়, কিভাবে বুঝবেন আমরা যেটা নিচের টাইপ মাথা ব্যথার কথা বলছি এটা তে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের ব্যথা হয় খুব তীব্র ব্যথা হয়না। দিনের স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যাওয়া যায় সাধারনত এই ধরনের মাথাব্যথা সাথে বমি ভাব বা বমি হয় না কিংবা আওয়াজে অস্বস্তি লাগে না, হাঁটাচলা করলে মাথা ব্যথা বাড়ে না, যদি এগুলো দেখা যায় তবে সেই মাথাব্যথা-মাইগ্রেন এর কারণে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এছাড়াও এই দুইটি ব্যথা মাথা আলাদা আলাদা জায়গায় দেখা দেয় ব্যথা সাধারণত মাথার দুই পাশেই হয়। মনে হয় ব্যথাটা মাথায় চাপ দিয়ে ধরে আছে কারও কারও ক্ষেত্রে মনে হয় ব্যথাটায় একটু পানির মত মাথায় বসে আছে আবার কারো কারো মনে হয় যে মাথার ওপর একটা ভারী ওজন বসে আছে, অনেকেরই মনে হয় ব্যথাটা মাথার বাইরে থেকে আসছে সাধারণত ব্যথা মাথার সামনে থেকে পেছনের দিকে এবং ঘাড়ে যায়৷ তবে কিছু ক্ষেত্রে মাথার অন্য যে কোন জায়গাতেও হতে পারে।
মাইগ্রেনের ব্যথা ধরণ
মাইগ্রেনের ব্যথা টা একটু অন্য রকম হয়। সাধারণত মাথার একপাশে হয় আর ব্যথাটা টনটন করতে থাকে মনে হয় একটা রক্তনালি সংকচিত আর প্রসারিত হচ্ছে। পার্থক্য বোঝা গেল এখন বলছি
টেনশন টাইপ মাথা ব্যথা হলে কি ওষুধ কত দিন খেতে হয়? এই ধরনের মাথাব্যথা কমাতে 1000 মিলিগ্রাম প্যারাসিটামল কার্যকরী। আমাদের দেশে সাধারণত 500 মিলিগ্রামের প্যারাসিটামল ট্যাবলেট পাওয়া যায়
। 500 মিলিগ্রামের ট্যাবলেট অন্যান্য ট্যাবলেট খাবেন কত ঘন ঘন খাবে? মাথাব্যথা চলে গেলে এই ওষুধ খাবেন না যদি মাথাব্যথা থেকে যায় তবে ৪ থেকে ৬ ঘন্টা পর পর খেতে পারেন তবে খুব খেয়াল রাখবেন যাতে দিনে বেশি পরিমান না খেতে হয়। চেয়ে বেশি না হয় ওষুধের এই পরিমাণটা একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য যার অন্য কোন রোগ নেই এবং শরীরের ওজন 50 কেজি বা তার বেশি আপনার ওজন যদি 50 কেজির নিচে হয় অন্য কোন রোগ থাকে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করবেন। এতক্ষণ বললাম সবচেয়ে কমন মাথাব্যথা অর্থাৎ টেনসনে মাথা ব্যথার কারণ ও সমাধান। এই ধরনের মাথাব্যথা কষ্টদায়ক তবে নির্বিষ জীবনের জন্য হুমকি নয়।
এখন কয়েকটি মাথাব্যথার কিছু ধরন বলব যেটা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিশ্চিন্ত হওয়া প্রয়োজন:
- ঘন ঘন মাথা ব্যথা
- ব্যথা দিলে বা মাথা ব্যথা তীব্র হলে
- ব্যথানাশক ওষুধ খেয়েও মাথাব্যথার না কমলে
- আর ক্রমশ খারাপ হতে থাকলে মাথার সামনের দিকে কিংবা একপাশে তীব্র টনটনে ব্যথা হলে এই ব্যথা কি মাইগ্রেন হতে পারে অথবা কিছু ক্ষেত্রে ক্লাস্টার হেডেক হতে পারে।
- মাথা ব্যথার সাথে ভাব বা বমি হলে এবং আলো বা আওয়াজ যন্ত্রণাদায়ক হয়ে উঠলে।
একটু আগেই বলেছি এটা মাইগ্রেন হতে পারে আপনার বয়স যদি চল্লিশের বেশী হয়ে থাকে আগে কখনো মাথা ব্যথা হতো না। কিন্তু এখন নতুন করে মাথা ব্যথা শুরু হলে সেটা ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। আপনার সাধারণত যেমন মাথাব্যথা হয় তার ধরন অনেক পাল্টে গেলে সেটাও ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। এই যে শেষ দুটো ধরন বললাম সেগুলো দেখা দিলেই যে ক্যান্সার হয়েছে তেমন না। আরও অনেক কারণে হতে পারে তবে ডাক্তার দেখিয়ে দুশ্চিন্তা মুক্ত হওয়া প্রয়োজন।
এখন আর কয়েকটি মাথাব্যথার ধরন বলব যেগুলো দেখা দিলে অনতিবিলম্বে হাসপাতালে যেতে হবে, কোনক্রমেই দেরি করা যাবে না৷ সেই মাথাব্যথার ধরন গুলো হচ্ছে ;
- মাথাব্যথা হঠাৎ শুরু হলে এবং শুরুতেই ব্যথার তীব্রতা অনেক বেশি হলে
- মাথা ব্যথা এত তীব্র হলে যে আপনার জীবনে আগে আর কখনও হয়নি( এগুলো ব্রেইনের রক্তক্ষরণের লক্ষণ)
- মাথায় গুরুতর আঘাত পেলে যেমন কোনো দুর্ঘটনার ফলে বা কোথাও পড়ে যাওয়ার ফলে প্রচন্ড মাথা ব্যথার।
- কথা বলতে, কিংবা কিছু মনে করতে হঠাৎ অসুবিধা হলে
- হাত বা পা দুর্বল অবশ হয়ে আসলে। ( এগুলো স্ট্রোকের লক্ষণ)
- অসংলগ্ন আচরণ করলে কিংবা গায়ে জ্বর আসলে।
- কাঁপুনি হলে ঘাড় শক্ত হয়ে গেলে অথবা চামরাইল ব্রাশ উঠলে( এগুলো ব্রেইনে ইনফেকশনের লক্ষণ)
- খিঁচুনি হলে অজ্ঞান হয়ে পড়লে( ব্রেইনের রক্তক্ষরণের লক্ষণ)
- চোখের সাদা অংশ লাল হয়ে আসলে চোখে ঝাপসা দেখলে বা দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেললে। (এখানেও দ্রুত চিকিত্সা প্রয়োজন)
- এছাড়া প্রচন্ড মাথা ব্যথার সাথে খাওয়ার সময় চোয়ালে ব্যথা হলে চোখে ঝাপসা দেখলে
- একটা জায়গায় দুটো দেখলে
- মাথার তালুতে চাপ দিয়ে ব্যথা অনুভব করলে দ্রুত হাসপাতালে যাবেন
এই লক্ষণগুলো মাথা ঘাড়ের রক্তনালীর প্রদাহের কারণে দেখা দিতে পারে। এক বা দুই চোখে অন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাই জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন হয়। নিরাপদে থাকবেন, ভালো থাকবেন