উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার কমানোর ঘরোয়া উপায়।
উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার এর প্রতিকার নিয়ে আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিত কথা বলব। শুরু করছি কিভাবে উচ্চ রক্তচাপের সৃষ্টি হয় সেটা সহজ ভাষায় বুঝিয়ে বলি কারণ রোগটা যত ভালোভাবে জানবেন নিয়ন্ত্রণে রাখা তত সহজ হবে।
ব্লাড প্রেসার কি? হাই ব্লাড প্রেসার কমানোর ঘরোয়া উপায়।
আমাদের শরীর রক্তনালীগুলোর রাবারের মতো, প্রয়োজনে প্রসারিত ও সংকুচিত হতে পারে। কিন্তু এই রক্তনালী যদি শক্ত হয়ে যায় তখন প্রয়োজনমতো প্রসারিত হতে পারেনা। রক্ত চলাচলে বাধা বেড়ে যায় দেখা দেয় হাই ব্লাড প্রেসার। এছাড়াও প্রেসার বাড়ার আরো কিছু সূক্ষ্ম কারণ রয়েছে। হাই ব্লাড প্রেসার কিভাবে সৃষ্টি হয় জানলেন।
প্রেসার বেড়ে গেলে শরীরে কি কি সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে?
- এখন খুব সহজ করে বুঝিয়ে বলছি প্রেসার বেড়ে গেলে শরীরে কি কি সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
- উচ্চ রক্তচাপের ফলে রক্তনালীগুলো দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
- রক্তনালির দেয়াল পাতলা হয়ে বেলুনের মতো ফুলে ওঠে সেটা হঠাৎ করে ছিঁড়ে যেতে পারে
- রক্তনালী ছিয়ে গেলে ব্রেইনের মারাত্মক রক্তক্ষরণ দেখা যায়
- উচ্চরক্তচাপ রক্তনালীকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে থাকে তখন রক্তনালীর গায়ে চর্বি কোলেস্টেরল ও ক্যালসিয়াম জমতে পারে।
- আস্তে আস্তে বড় হয় রক্তনালী সরু হয় কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় চর্বির গায়ের রক্ত জমাট বাধে একপর্যায়ে রক্তনালীর পুরোটাই বন্ধ হয়ে যেতে পারে
- রক্ত আর সামনে আগাতে পারে না এটা খুবই মারাত্মক ঘটনা আপনারা নিশ্চয়ই ব্রেইন স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের কথা শুনেছেন এটা সেই ঘটনা.
ব্রেইনের রক্তনালী বন্ধ হলে হয় স্ট্রোক, তখন ব্রেইনের একাংশ আর রক্ত পায়না। কোষগুলো মরে যায় কিভাবে হার্টের রক্তনালী বন্ধ হলে হয় হার্টঅ্যাটাক এছাড়াও হাই ব্লাড প্রেসার দীর্ঘদিন থাকলে আরো অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন হার্ট দুর্বল হয়ে যাওয়া, কিডনি অকেজো হয়ে যাওয়া, দৃষ্টিশক্তিতে সমস্যা দেখা দেয়া ইত্যাদি। অনেকগুলো গুরুতর অসুখের কথা বললাম তবে আমার মতে হাই ব্লাড প্রেসার সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিক এগুলোর কোনটাই নয় সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হচ্ছে এর নীরবতা কেন হাই ব্লাড প্রেসার শরীরে যখন দেখা দেয় তখন আপাতদৃষ্টিতে কোন ব্যথা বা অসুবিধার সৃষ্টি করে না। তাই আমরা অধিকাংশ মানুষই এটা কে অগ্রাহ্য করে। সেই সুযোগে হাই ব্লাড প্রেসার আস্তে আস্তে শরীরে ক্ষতি করতে থাকে হঠাৎ একদিন দেখা দেয় মারাত্মক ব্যাধি। আশা করি পরিষ্কার হয়েছে কেন হাই ব্লাড প্রেসার কখনোই হালকাভাবে নেয়া যাবে না।
হাই প্রেসার কমানোর খাবার | উচ্চ রক্তচাপ হলে যা খাওয়া যাবে না।
এই তালিকায় এক নম্বর হলো "লবণ " দিনে কতটুকু লবণ খাচ্ছেন তার ওপর সতর্ক নজর রাখতে হবে। দিনের চা চামচের পরিমাণে এক চা-চামচ থেকে একটু কম লবণ খাবেন। এখন আপনি বলতে পারেন এটাতো সহজ লবণদানি থেকে দিনে পৌনে ১ চা-চামচ লবণ নিয়ে খেতে হবে। আমি ভাতের সাথের লবনের কথা বলছি না । তবে বিষয়টা এমন নয় আমরা দিনে যত টুকু লবণ খায় তার বেশিরভাগই খাবারের ভেতরে লুকিয়ে থাকে, বাসায় ভাতের সাথে যে তরকারী খায় সেগুলো সবই লবণ দিয়ে রান্না করা। ফল খেতে গেলে যেমন আমরা জাম্বুরা পেয়ারা মাখাতে একটু লবণ দিয়ে থাকি। কারোর মজা লাগে বেশি ঝাল মুড়ি সবগুলোতেই লবন দেয়ার নাই । আমরা দিনে কি পরিমাণে ডুকছে সেটার হিসেব আমাদের কাছে থাকে না। গবেষণায় দেখা গেছে বেশিরভাগ মানুষই নিজের অজান্তে মাত্রাতিরিক্ত লবণ খাচ্ছেন উচ্চ রক্তচাপের রোগী হিসেবে আপনার জন্য সেটা খুবই বিপদজনক, তাই এবার থেকে সেটা হিসাবে আনতে হবে।
কি কি উপায়ে লবণ খাওয়া কমান যায়?
কাঁচা লবণ খাবেন না, সামনে বা হাতের কাছে থাকলে নবনীতা ইচ্ছা করতে পারে। অনেকের মধ্যে একটা ধারণা আছে যে কাঁচা লবণ ব্লাড প্রেসার এর জন্য ক্ষতিকর ভাজা লবণ খেলে সমস্যা নেই, এটা ভুল! লবণ কাঁচা হোক আর ভালো হোক তাতে সোডিয়াম থাকে। আর সেটাতে ব্লাড প্রেসার বাড়ে। তাই তরকারিতে লবণ কম দিতে হবে।
রান্না করার উপাদান গুলো তে কতটুকু লবণ আছে সেটা খেয়াল রাখতে হবে সয়া সস বিট লবণ টেস্টিং সল্ট এগুলোতে বেশি পরিমাণে লবণ থাকে। তাই এসবের বদলে অন্য কিছু ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন। বাসায় রান্না করা কিছু খাবার এবং কিছু প্রাকৃতিক খাবারেও লবণ একটু বেশি পরিমাণে থাকে সেগুলো এড়িয়ে চলবেন বা খেলেও অল্প পরিমাণে খাওয়ার চেষ্টা করবেন যেমন: চিংড়ি মাছ
হাই ব্লাড প্রেসার কমানোর ঘরোয়া উপায়
বাজার থেকে কেনা খাবার রাস্তার পাশে টংয়ের দোকানের খাবার হোটেল কিংবা রেস্টুরেন্টের খাবার এগুলো যতটা পারেন এড়িয়ে চলবেন। কেননা এগুলোতে কতটুকু লবণ দেয়া আছে সেটা আপনার জানা নেই। ব্লাড প্রেসার রোগীদের কথা চিন্তা করে কম লবণ দিয়ে অল্প স্বাদের খাবার রান্না করার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে তাই এগুলো পরিহার করার উত্তম। টমেটো সস, টমেটো চপ, এড়িয়ে চলবেন এগুলোতে অনেক লবণ থাকে। নাস্তায় সিংগারা এসব পরিহার করলে নিজের অনেক উপকার করবে। ফল খেতে পারেন, তবে ফলাবার বিট লবণ দিয়ে মাখিয়ে খাওয়া যাবে না। যারা প্রক্রিয়াজাত খাবার কেনেন যেমন নুডলস পাস্তা ইত্যাদি তারা প্যাকেটের গায়ে লেখা লবণের পরিমাণ লবণ কম আছে এমন অপশন থাকলে সেটা কিনবেন।
দাওয়াতে গেলে পোলাও ফ্রাইড রাইস না নিয়ে পারলে সাদা ভাত খাবেন, কারণ আমরা সাধারণত ভাত লবণ ছাড়াই রান্না করি। রান্না নিয়ে সাধারন সেকারিটি খাবার পরিহার করার জন্য খাবারের মধ্যে থেকে আর কি কি করতে হবে প্রথমে বলেছি। লবণ কমানোর তালিকা দুই নম্বর হলো তেল চর্বি বা ফ্যাট জাতীয় খাবার সব মিলিয়ে দিনে ২ থেকে ৩চা চামচের বেশি খাওয়া যাবে না। সেটা মাংস সবজি তরকারি সাথে হোক বা নাস্তার ভাজাপোড়া সাথেই হোক।
এক চা চামচ ব্যবহার করবেন তাহলে কতটুকু তেল দিচ্ছেন সেই হিসেব রাখতে সুবিধে হবে।
মাংস খেতে হলে চর্বি ছাড়া মাংস বেছে নিবেন, মুরগির চামড়া খেতে মজা লাগলো অনুগ্রহ করে এড়িয়ে চলবেন। বর্তমানে মুরগির চামড়া অনেক ফ্যাট থাকে। 4g আর মাখন থেকে দূরে থাকবেন, কারণ এই গ্রুপে ফ্যাটের পরিমাণ বেশি দুধের সর ফুল ক্রিম দুধ এবং মিষ্টি দই খাবেন না বরং তাকফীর দুধ আর টক দই খাবেন সিদ্ধ করে খাওয়ার চেষ্টা করবেন। একদিনে খাবারে 1 থেকে 2 চামচ তেল ব্যবহার করেবেন।
উচ্চ রক্তচাপ কমানোর সহজ উপায়
এক দিনে চার থেকে পাঁচটা মাঝারি সাইজের ফল খাবেন। একবারে সম্ভব না হলে একটু একটু করে বাড়ান। ধরেন আপনি হয়তো দিনে এক বা তার কম ফল খান তাহলে চিন্তা করেন আগামী এক সপ্তাহ আপনি প্রতিদিন অন্তত দুইটা করে ফল খাবেন। সে অনুযায়ী বাজার করে রেখে, সকালের নাস্তায় একটা ফল খান। অফিসে ব্যাগে করে একটা ফল নিয়ে যান। সাথে যাতে ক্ষুধা লাগলে সেটা খেতে পারেন। পরের সপ্তাহে ফলে সংখ্যাটা আরো বাড়ানো ২দিনে ২থেকে আড়াই। কাটাবার রান্না করা সবজি খাবেন এটা আগের মতোই অল্প অল্প করে পরিবর্তন করুন, যদি তেমন খাবার না হয় তাহলে সিদ্ধান্ত নেন আপনি আগামী সপ্তাহে প্রতিদিন অন্তত ১ কাপ সবজি খাবেন।
ফল আর শাক সবজিতে প্রাকৃতিকভাবেই পটাশিয়াম মজুদ আছে এগুলো আপনার রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করবে। পটাশিয়াম বাড়ানোর জন্য ভুলেও আবার নিজে নিজে পটাশিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া শুরু করবে না।
পটাশিয়াম বাড়ানোর তৃতীয় উপায় হল দুধ এবং দই। মিষ্টি দই খাওয়া যাবে না কারণ সেগুলো একটার বেশি খেতে হবে ফ্যাক্টরি দুধ কিংবা টক দই ৩-২ থেকে প্রার্থী দুধ খেতে পারেন। এক কাপের মাপ হবে আড়াইশো এমএল এর মত।
এতক্ষণ যে খাবারগুলো বেশি খাওয়ার কথা বললাম তার উদ্দেশ্য হলো স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। খাবার কমিয়ে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী খাবার গুলো বেশি খাবেন। আপনি নাস্তায় তিনটা সিঙ্গারা খেতেন এখন তিনটের বদলে একটা সিঙ্গারা সাথে একটা কলা খাবেন, বেশি ভাত খেতেন এখন ভাত কমিয়ে সবজি বেশি খাবেন। কিন্তু যদি এমন হয় যে আগে আপনি দুই প্লেট ভাত খেতেন এখনো দুই প্লেট ভাতিখান সাথে যোগ করেছেন 500ml দুধ তাহলে কিন্তু ওজন বেড়ে যাবে এবং হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এই যে খাবার নিয়ে এত কথা বললাম এগুলো একটাও আমার মনগড়া কথা না বছরের পর বছর ধরে গবেষণার মাধ্যমে চিকিৎসা বিজ্ঞান যা জানতে পেরেছে।