৬টি কোমর ব্যথা সারানোর সহজ ও ঘরোয়া উপায়
কোমর শরীরের অন্যতম প্রধান অঙ্গ। এটি আপনাকে হাঁটতে, দৌড়াতে, উঠতে, বসতে, ঘুমাতে বা দৈনন্দিন জীবনের অন্যান্য অনেক কাজ সহজে করতে সাহায্য করে। যখন কোনো কারণে পিঠে ব্যথা হয়, তখন সেই কাজগুলো করতে গিয়ে অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। আজ থেকে কয়েক বছর আগেও কোমর ব্যথা শুধু বয়স্কদের মধ্যেই দেখা যেত। যদি আপনার হাটুতে ব্যথা হয় তাহলে এটা পড়ুন ;-হাটুর ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা
নিষ্ক্রিয় জীবনযাপন, কর্মসংস্কৃতি, কাজের চাহিদা এবং পুষ্টির অভাবের কারণে আজ এই সমস্যাটি যুবকদের মধ্যে বেশি দেখা যাচ্ছে যার মধ্যে ছেলে ও মেয়ে উভয়ই রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোমর ব্যথার কারণ যদি কোনো মারাত্মক রোগ না হয়, তবে বিশেষ কিছু ঘরোয়া প্রতিকারের সাহায্যে তা সহজেই কাটিয়ে ওঠা যায়।
কোমর ব্যথার কারণ :
অনেক কারণে কোমর ব্যথা হয়। এর কারণগুলো মাথায় রেখে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে সহজেই প্রতিরোধ করা যায়। কোমর ব্যথার প্রধান কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:-
- কম্পিউটারের নিয়ে বসে থাকলে কোমর ব্যথা হতে পারে
- নরম গদিতে ঘুমালে কোমর ব্যথা হতে পারে
- দীর্ঘ সময় ধরে হাই হিলপরলে কোমর ব্যথা হয়
- ওজন বৃদ্ধি বা কমে যাওয়ার জন্য কোমর ব্যথা হয়
- শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাবে কোমর ব্যথা হয়
- অনেকক্ষণ এক জায়গায় বসে থাকলে
- অলসভাবে জীবনযাপনের ফলে পিঠে ব্যথা হয়
- পেশী সমন্বয় হারানোর কারণে পিঠে ব্যথা
- পিঠে ব্যাঘাত ঘটায় কোমর ব্যথা হয়
- গুরুতর রোগের কারণে কোমর ব্যথা হয়
- গ্যাসের কারণে কোমর ব্যথা হয়
কোমর ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা
কোমর ব্যথার কারণ যদি কোনো গুরুতর আঘাত বা রোগ না হয়, তাহলে কিছু বিশেষ ঘরোয়া প্রতিকারের মাধ্যমে এর চিকিৎসা করা যেতে পারে। কোমর ব্যথার ঘরোয়া প্রতিকারের মধ্যে রয়েছে:-
01. গরম পানির কম্প্রেস দিয়ে পিঠের ব্যথার চিকিৎসা
হালকা গরম পানি অনেক সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে । পিঠের ব্যথায়ও এটি খুবই উপকারী। কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে সেই পানিতে তেল ভিজিয়ে ছেঁকে বের করে নিন এবং তারপর তা দিয়ে আপনার কোমর ও পিঠ সংকুচিত করুন।
মনে রাখবেন আপনি আপনার ত্বকে সরাসরি গরম পানি লাগাবেন না। প্রয়োগ করার আগে, আপনার কোমরে এবং পিঠে একটি সুতির কাপড় রাখুন। তারপর তার উপর তোয়ালে লাগিয়ে নিন। গরম পানি সরাসরি ত্বকে লাগাবেন না। সুতি কাপড়ের একটি স্তর আবশ্যক।
02. নারকেল তেল দিয়ে কোমর ব্যথার চিকিৎসা
নারকেল তেলে 4-6টি রসুনের কোয়া মিশিয়ে আগুনে ভালো করে রান্না করুন। রান্না করার পর, তেল ঠান্ডা হয়ে গেলে, এটি দিয়ে আপনার কোমর এবং পিঠে ভাল করে ম্যাসাজ করুন। এই তেলটি পিঠের নীচের ব্যথার জন্য একটি ভাল প্রতিকার ।
রসুনের অনেক গুণ রয়েছে যা কোমর ব্যথা কমাতে সহায়ক। মনে রাখবেন যে প্রস্তুত তেল দিয়ে ম্যাসাজ করার অন্তত 30 মিনিট পরে গোসল করুন যাতে আপনার শরীর তেলটি সঠিকভাবে শোষণ করে।
03. প্রতি এক ঘন্টায় 10-15 মিনিট বিরতি নিন
আপনার কাজ যদি একটানা দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকে তাহলে প্রতি এক ঘণ্টায় 10-15 মিনিট বিরতি নেওয়া উচিত। এটি করার ফলে, আপনার কোমর এবং পিঠের পেশী শিথিল হয় এবং শক্ত হওয়ার ঝুঁকি শেষ হয়।
04. আপনার ভঙ্গি ঠিক করুন
অফিস, মেট্রো, বাস, বাইক বা ট্রেনে বসা অবস্থায় আপনার ভঙ্গির বিশেষ যত্ন নিন। সঠিক ভঙ্গিতে বসা শরীরে রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে, যার ফলে পেশী শক্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে। বেশির ভাগ লোকই অনুপযুক্ত বসার ভঙ্গির কারণে পিঠে ব্যথার অভিযোগ করেন।
05. ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান
শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাবেও কোমর ব্যথা বা পিঠের নিচের দিকে ব্যথা হতে পারে। 30-35 বছর বয়সের পর শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি শুরু হয়।
আপনার পিঠে ব্যথার কারণ যদি ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হয়, তাহলে আপনার খাদ্যতালিকায় ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ জিনিস অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। আপনি একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করার পরে ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্টও নিতে পারেন।
06. ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন
কোমর ব্যথার কারণ যদি কোনো নির্দিষ্ট রোগ হয়, তাহলে ঘরোয়া প্রতিকার কোনো কাজে আসবে না। এই পরিস্থিতিতে, আপনার একজন অর্থোপেডিস্টের সাথে পরামর্শ করা উচিত এবং সময়মতো সঠিক চিকিত্সা করা উচিত।
পরীক্ষার সাহায্যে, ডাক্তার ব্যথার সঠিক কারণ নিশ্চিত করে। এর পরে, পিঠে ব্যথার কারণ এবং তীব্রতার উপর নির্ভর করে চিকিত্সা প্রক্রিয়া শুরু করুন।
কোমর ব্যথা সারানোর সহজ উপায় গুলো হচ্ছে :
আপনার জীবনে কিছু বিশেষ অভ্যেস পরিবর্তন করে আপনি সহজেই কোমর ব্যথা প্রতিরোধ করতে পারেন। কোমর ব্যথা প্রতিরোধের উপায় নিম্নরূপ:-
- সঠিক ভঙ্গিতে বসুন
- দীর্ঘ সময় ধরে শুয়ে থাকা এড়িয়ে চলুন
- স্বাস্থ্যকর খাদ্য তালিকা অনুসরণ করুন
- আপনার খাদ্যতালিকায় ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার যুক্ত করুন
- পর্যাপ্ত জল এবং জুস পান করুন
- সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল খান
- প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম করুন
- এক জায়গায় বেশিক্ষণ বসে থাকা থেকে বিরত থাকুন
- ঝাঁকুনি দিয়ে উঠা, বসা বা ঘুমানো এড়িয়ে চলুন যাতে কোমরে হঠাৎ চাপ না পড়ে
- প্রতিদিন কমপক্ষে 10-20 মিনিট হাঁটুন, এটি মেরুদণ্ডকে শক্তিশালী করে