মুদ্রাস্ফীতি কি? মুদ্রাস্ফীতির কারণ ও নিয়ন্ত্রণ করার উপায়
মুদ্রাস্ফীতি কি? যা আমাদের অর্থনীতিতে বা আমাদের আর্থিক খাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। যা এড়াতে পারলে আমাদের দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তোলা যায়। যখন কোন অর্থনৈতিক ব্যাপারে আলোচনা হয়, তখন মুদ্রাস্ফীতির নাম আমরা শুনতে পাই। আমরা আজ এই পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করব।
মুদ্রাস্ফীতি এমন একটি অবস্থা যা সমগ্র জাতিকে প্রভাবিত করে। কোনো অঞ্চল ও শ্রেণী এর প্রভাব এড়াতে পারে না। এটি ধনী, ঋণখেলাপি, বিনিয়োগকারী, ব্যবসায়ী, বেতনভোগী, জমির মালিক, সরকার, আমদানিকারক, রপ্তানিকারক, শ্রমিক, ভোক্তা ইত্যাদি প্রতিটি শ্রেণিকে প্রভাবিত করে।
মুদ্রাস্ফীতি কি?
আগে পাঁচ কেজি আলু ৪০ টাকায় কিনতে পেতাম। আর আজ ১ কেজি ৪০ টাকায় কিনতে হয়। ৪০ টাকা একই রয়ে গেছে কিন্তু যে জিনিস কিনতে পারেন তার পরিমাণ কমে গেছে; অর্থাৎ একই পরিমাণ টাকায় এখন কম পণ্য কিনতে পারছেন, একে বলে টাকার ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়া বা মুদ্রাস্ফীতি|
মুদ্রাস্ফীতির সংজ্ঞা "পণ্য ও সেবার মূল্যের স্থায়ী ও অস্থায়ী বৃদ্ধি যা অর্থের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস করে তাকে মুদ্রাস্ফীতি বলে।" সুতরাং, মূল্যস্ফীতি হল মূল্য স্তর বৃদ্ধির একটি নির্দিষ্ট পর্যায়, যেখানে টাকার ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পায়।
"মুদ্রাস্ফীতি হল সেই অবস্থা যেখানে টাকার মান ক্রমাগত কমতে থাকে অর্থাৎ পণ্যের দাম বাড়তে থাকে।"
মুদ্রাস্ফীতি বলতে দ্রব্য ও সেবার মূল্য বৃদ্ধিকে বোঝায় যখন পণ্য ও সেবার মূল্য স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে বৃদ্ধি পায়, তখন তাকে মুদ্রাস্ফীতি বলে।
মুদ্রাস্ফীতির কারণ :
মূল্যস্ফীতি অনেক কারণে ঘটতে পারে, কিছু প্রধান কারণ নিম্নরূপ -
সরকারী ব্যয় বৃদ্ধি পাবলিক ব্যয় বৃদ্ধির কারণে জনসাধারণের সাথে অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং অর্থ ব্যয়ের চাহিদা বেশি থাকে। যখন চাহিদা বৃদ্ধি পায় এবং উৎপাদন মন্থর হয়, তখন টাকার মূল্য হ্রাস পায়।
- সরকারী ব্যয় বৃদ্ধি -সরকারী ব্যয় বৃদ্ধির কারণে জনসাধারণের সাথে অর্থের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং অর্থ ব্যয়ের চাহিদা বেশি থাকে। যখন চাহিদা বৃদ্ধি পায় এবং উৎপাদন মন্থর হয়, তখন টাকার মূল্য হ্রাস পায়।
- উৎপাদনের যোগান- উৎপাদন কমে যাওয়া এবং দোকানদারদের মজুদও মূল্যস্ফীতির হার বাড়ায় কারণ বাজারে চাহিদা বেশি হয় এবং উৎপাদন কম হয়ে পড়ে।
- পরোক্ষ কর- সরকার কর্তৃক আরোপিত পরোক্ষ কর ব্যয়ের মূল্য বৃদ্ধি করে যা পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণ।
- জনসংখ্যা বৃদ্ধি - জনসংখ্যা বৃদ্ধিও মুদ্রাস্ফীতির একটি প্রধান কারণ কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি চাহিদাও বাড়ায়।
- বেতন বৃদ্ধি - কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি কিন্তু একই অনুপাতে মোট উৎপাদন বৃদ্ধিও মূল্যস্ফীতির কারণ।
- আমদানি বৃদ্ধি - আমদানি বৃদ্ধির কারণে দেশের মুদ্রা বাইরে চলে যায়, যার জন্য সরকারকে আরও বেশি মুদ্রা ছাপাতে হয়। অত্যধিক টাকা ইস্যু অর্থের প্রচলন বাড়ে. যাতে সরকার ঘাটতি বাজেটের যোগান দিতে আরও বেশি অর্থ উৎপাদন করে।
সুতরাং আমরা বুঝতে পারি যে মুদ্রাস্ফীতি অনেক কারণে ঘটতে পারে।
মুদ্রাস্ফীতির নিয়ন্ত্রণ করার উপায় :
- উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে - উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধির মাধ্যমে মুদ্রাস্ফীতির প্রভাবও হ্রাস পায়। তাই সরকার কর্তৃক এমন শিল্পের লাইসেন্স দেওয়া উচিত যাতে কম পুঁজি বিনিয়োগের প্রয়োজন হয় এবং দ্রুত উৎপাদনের মাধ্যমে ভোক্তাদের সর্বোচ্চ চাহিদা মেটাতে পারে।
- কালোবাজারির বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন করে- সরকার মজুতদার ও কালোবাজারিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিলে বাজারে পণ্যের সহজলভ্যতা বজায় থাকবে এবং পণ্যের দামও স্থিতিশীল থাকবে।
- আর্থিক পরিমাপের মাধ্যমে - মুদ্রানীতির মাধ্যমে আমরা অর্থের পরিমাণে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারি। Bangladesh bank দেশের মুদ্রানীতি নির্ধারণ করে। মুদ্রানীতির মাধ্যমে টাকার পরিমাণের ভারসাম্য বজায় রেখে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
- সরকারি ব্যয় নিয়ন্ত্রণ : মুদ্রাস্ফীতির সময়ে সরকারের উচিত ব্যয় কমানো যাতে অতিরিক্ত অর্থ জনগণের হাতে না পৌঁছায়। বিশেষ করে অনুৎপাদনশীল ব্যয় বন্ধ করতে হবে, কারণ এতে উৎপাদন বাড়ে না এবং দাম বাড়তে থাকে।
- সঞ্চয় প্রণোদনা : জনসাধারণের কাছে উপলব্ধ ক্রয়ক্ষমতা যদি ক্রমাগত ব্যয় করা হয়, তাহলে দাম অবশ্যই বাড়তে শুরু করে। তাই সরকারের উচিত ব্যাংক ও ডাকঘরের মাধ্যমে এ ধরনের নীতি বাস্তবায়ন করা যাতে মানুষ সঞ্চয় করতে উৎসাহিত হয়। এজন্য আকর্ষণীয় সুদের হারও গ্রহণ করতে হবে
disclaimer:
এখানে প্রদত্ত তথ্য সঠিক কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য সমস্ত প্রচেষ্টা করা হয়েছে। যাইহোক, তথ্যের সঠিকতা সম্পর্কে কোন গ্যারান্টি দেওয়া হয় না। কোনো বিনিয়োগ করার আগে অনুগ্রহ করে স্কিম তথ্য নথির সাথে যাচাই করুন।